Wednesday, February 18, 2009

অন্তর্দেশে একটি কল

ফেব্রুয়ারী ১৬, সোমবার ডাক্তার করার পর আব্বুকে সুস্থ দেখায়। মঙ্গলবার, ডাক্তার বল্ল সব ঠিক আছে, কোন সমস্যা না থাকলে ছেড়ে দিবে। আমরা সবাই খুব খুশী। মঙ্গলবার রাতে আব্বু আমাকে ফোন করে বল্ল কারডিওলজিস্ট আসছে, বলে গেল আব্বুকে আরো দুদিন থাকতে হবে। কেন? বলে গেল আব্বুর হার্ট রেট নাকি অনেক কম। একজন এক এক ডাক্তার এক এক রকম কথা বলে। সবাই চিন্তাই পরে যাই। এইটার মানে কি? পুরাপুরি নির্বাক সবাই। আমি মানা করে দিলাম। আমি আগে ডাক্তার এর সাথে কথা বলতে চাই। কেন করবে আবার?

কাজ থেকে যাওয়ার পর আব্বুর টেম্প ডাক্তার এর সাথে কথা বলি বুধবার রাতে। আমাকে আব্বুর হার্টের
EKG রেপোর্ট দেখাই। আব্বুর হার্ট কিছুক্ষন নরমাল বিট করে আর কিছুক্ষন ফাস্ট। এই ফাস্ট বিটের কারনে আব্বু নাকি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। আব্বুর সুগার এর প্রব্লেম হইনি। এই ফাস্ট বিট যদি তিন সেকেন্ড এর বেশি থাকে তখন উনার হঠাৎ মৃত্যু হতে পারে। আর সেই জন্য আব্বুকে প্রথমে EPS (Electrophysiology Study) করবে যদি নেগেটিভ হয় তাহলে মেডিসিন দিয়ে ঠিক করবে আর পসিটিব হলে ICD (Implantable cardioverter-defibrillator) লাগাতে হবে। সেই জন্য আব্বুকে Consent সাঈন করতে হবে। যদি করতে না চাই তাহলে আমাদের ছেড়ে দিবে। ওদের বলার ছিল বলছে বাকি আমাদের ইচ্ছে করতে চাই নাকি চাইনা।

আব্বুর রুমে ঢুকতেই সবাই আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বললাম নিজেকে এক্তু সামলিয়ে। হে সমস্যা কি? আব্বুকে ভাল করার জন্য যা করতে হবে করব। আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আমি চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলি। আব্বু কিছুতেই রাজি হইনা। বলে আমি ভাল আছি। আমাকে ছাড়তে বল। রাতে বুঝানোর জন্য হাসাপ্তালে সবাই আসে। বড় ভাইয়া, মামা, এমনকি চার বছরের ছোট্ট মেয়ে প্রইতী এসে আব্বুকে বলে যে, "দেখ আমার ভেতরে এক্তা মেসিন আছে। দাদু ভাই আমি ভাল আছি তুমিও ভাল থাকবে।" আব্বু মানতে রাজীনা, একটা মেসিন নিয়ে উনার বেঁচে থাকতে হবে।

বুধবার রাতে আব্বুকে বুঝারনোর জন্য রুম থেকে বের হয়ে ওয়েটিন রুমে বসাই। সাঈন করতে হবে। দুই মিনিট যেতে না যেতেয় আব্বু সক্ত হয়ে যাই, তখনি আব্বু
অজ্ঞান হয়ে সক্ত হয়ে যাই, চোখ বন্ধ করে ফেলে কাঁপ্তে কাঁপ্তে, ঘামতে থাকে। আমি চিৎকার করি হেল্প হেল্প হেল্প...নার্স এসে আব্বুকে ধরে, আমি, ছোট্ট ভাই এরফান আব্বুকে ধরে রুমে নিয়ে যাই। বেডে রাখতেই আব্বু চোখ খুলে ফেলে। বলা শুরু করে "কি হইছে আমি ঠিক আছি, আমি ঠিক আছি।" আব্বুকে প্রায় কয়েকজন নার্স এসে ঘিরে ধরে। কি সব লাগাই তারপর আমাদের বল্ল আব্বু নিঃশ্বাস নিচ্ছে উনাকে ICU ইউনিটে নিয়ে যাবে। আমরা দোয়া পড়তে থাকি, আম্মু, আমি, এরফান...আব্বুর বেডকে নার্সরা জোরে ধাক্কা মেরে তাড়াতাড়ি পোঁছাই ICU ইউনিটে। সেখানে আমাদের ঢুকতে দেয়না।

ভাইয়াকে ফোন করি, এরপর ওয়েটিন রুমে অপেক্ষা। ডাক্তার এসে বলে আব্বুকে কালকের মধ্যে
EPS & ICD করতে হবে। না হলে হার্টের সমস্যা আরো বারবে। আমরা মত দিয়ে দিলাম। কিন্তু আমাদের মতে কি যায় আসে। ওরা আব্বুকে আবারো জানাই। এতবার রেকুএস্ট করলাম যে আব্বুকে জানায়োনা। কিন্তু ওরা মানেনা। বলে যে এইটা নিয়ম জানাতে হবে। আব্বুকে জানালে পড়ে ভীষন মন খারাপ করে। আমাদের উপর রাগ করে থাকে। কথা বলেনা। আমরা সেইদিন রাত তিনটে পর্যন্ত হাস্পাতালে কাটাই। আম্মুকে অনেক মানিয়ে বাসায় নিয়ে যাই।

বৃহস্পতিবারে সকালে কেউ কাজে যাইনা ওপারেশন করবে তাই। কিন্তু পুরো দিন পার হওয়ার পর সয়তান ডাক্তার এসে বলে যে বৃহস্পতিবারে পারবেনা কারন অনেক ইমারজেন্সি রোগীদের আগে করতে হবে। সরি বলে শুক্রবারের সকালে করবে প্রমিস করে। আমরা আবারো শুক্রবারে এসে অপেক্ষা করি। সকাল আটটাই আব্বুকে নিয়ে যাই। আব্বুর সামনে নরমাল থাকার চেষ্টা করি।

এক ঘন্টা পর বের হয়ে বলে, আব্বুর হার্ট ঠিক আছে। রেসাল্ট নেগেটিভ আব্বুকে
ICD করতে হবেনা কিন্তু Pacemaker লাগাতে হবে। যদি বৃহস্পতিবার সকাল একটাই যদি অজ্ঞান না হত তাহলে দিতে হতনা, কিন্তু...আমরা ঠিক আছে বলে আবারো অপেক্ষা শুরু করলাম আরো দু'ঘন্টার জন্য। অপেক্ষার ঘড়ি শেষ হয়ে আসে। ডাক্তার আবার বের হয়ে আমাদের কাছে আসে। আব্বু ভাল আছে। সব ঠিক হয়েছে। কোন সমস্যা নেই। আব্বুর সাথে দেখা করতে দেয়। আব্বু চোখ খুলতেই আমাদের দেখে জিজ্ঞেস করে "আমি কোথায়?" আমরা সবাই হেসে উনাকে বলি এইত আমারদের সাথে। "আমাকে মেসিন লাগাইছে?" বাবা আমরা জানিনা ডাক্তার এর সাথে কথা হইনি। মিথ্যা বলতে হল।

আব্বু কে দু'দিন পরে ছেড়ে দেই। কিন্তু মাঝখানে আব্বুর প্রেসার একদম কমে যাই সুগার অনেক বেড়ে যাই। এই সমস্যা এখনো আছে। আমি জানিনা কি করব। বাসাই আনার পর এক্তু সুস্থ এক্তু অসুস্থ। কেউ জিজ্ঞেস করলে আব্বুকে কেমন আছেন? উত্তরে আব্বু বলে যে কেমন আর? কল বসাইছে। এখন কলের উপর নির্ভর হয়ে চলতে হবে।

আমার বাবা আমাদের পাশে আছে সেই জন্য আল্লাহ কে অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবাই দুয়া করছে উনার জন্য। সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

Friday, February 06, 2009

আমার বাবা আবারো অসুস্থ হয়ে গেল

সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বের হই। আর গাড়ি স্টারট দিতে দেখি কাজ করেনা। পুরোনো গাড়ি কিনলে যা হয়। এরপর আম্মুকে বললাম আব্বুকে বলো আমাকে নামিয়ে দিতে। আব্বু উঠে তৈরি হয়ে গাড়ির পাশে আস্তে না আস্তে গাড়ি ধরে ফেলে। আমি জিজ্ঞেস করি যে কি হয়েছে? বল্ল মাথা। মাথা বলতেই শক্ত হয়ে যাই। ভাগ্য ভালো যে আমি পাশে ছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলি। চিৎকার দিতে আম্মু বের হয়ে আসে। এরপর আম্মু ধরে আব্বুকে, আমি বাসা থেকে দুধ নিয়ে আশি। ভাবীকে চিৎকার দিয়ে বলি চিনি আনতে। আব্বুর সুগার লো হয়ে গিয়েছিল। আব্বু মারাত্তক ভাবে সক্ত হয়ে ছিল আম্মুর কোলে। দাঁত সক্ত ছিল, কোন রকমে আমার আঙ্গুল দিয়ে ফাঁক করে দুধ ঢেলেদি। এরপর চিনি মুখের ভেতরে দিয়ে মালিশ করি। পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে যাই। ক্ষানিক্ষন পরে জ্ঞান ফিরে আসে। বলেযে আমি ঠিক আছি। আমি তাড়াতাড়ি ফোন নিয়ে ৯১১ ডায়াল করি। এরপর আব্বুকে নিয়ে যাই হাস্পাতালে। ডাক্তার সব চেক করল। বল্ল যে ভাগ্য ভালো আমরা সুগার দিয়েছিলাম মুখে। নইলে কোমাই চলে যেত।

বাবাকে ফেলে আমার কাজে আস্তে হচ্ছে। এমন জীবন। অফিসে দু'জন কে ফাইয়ার করে দিল। তাই এমন অবস্থাই অফিসে বসে কাজ করছি। মনত পড়ে আছে বাবার কাছে। সাথে মা আছে। আজ দুপুরে কাজ থেখে এক ঘন্টার ছুঠি নিয়ে বাবাকে দেখে আসি। বাবাকে দেখে ভালো লাগলনা। উনি অনেক দুর্ব্ল হয়ে গেছেন। হাস্পাতালের বেডে বসে চিন্তা করছে আমাদের কথা। আমরা ঘরের পেমেন্ট কেমনে করব যদি চাকরি চলে যাই। চার পাশে ডিপ্রেসন নেমে আসছে। আমি বললাম বাবাকে যা হবার হবে। তুমি চিন্তা করনা। চিন্তা করলে সমস্যার সমাধান হবে? উনাকে বুঝ দিলাম। কিন্তু কার কথা কে শোনে? উনি চুপ হয়ে বসে ছিল আমি যতক্ষন ছিলাম। ডাক্তার আসে...

ডাক্তার এর সাথে কথা বলে জানতে পারলাম বাবাকে আবারও "Cardiac Catheterization" করাবে। এইভাবে কন্ট্রল করে চলার পরও আবার চলে এল সেই স্টেজে। আমার বছরটা শুরু হল কষ্ট আর টেন্সনে। কে জানে কপালে কি আছে। আর কত সহ্য করা যাই?