Tuesday, July 28, 2009

তিক্ত অভিজ্ঞতা - কানাডা আমায় উপহার দিল তিনটে টিকেট...

http://images.zaazu.com/img/rain-animated-animation-rain-smiley-emoticon-000400-large.gif
ফ্লোরিডায় গাড়ি চালানোর নিয়ম অনেক ভিন্ন কানাডার চেয়ে। ফ্লোরিডায় স্পীড লিমিট লোকাল ৪৫ মাইলে মানে ৭২ কিলোমিটার। আর কানাডায় টরেন্টো শহরে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। ফ্লোরিডায় সাত বছর ড্রাইভ করে আমি কখনো একটা টিকেট পেলামনা আর কানাডায় আসতে না আসতে তিনটা টিকেট উপহার দিল আমাকে। আমার এমন রাগ উঠল সেই থেকে আমি ড্রাইভ করা বন্ধ করে দিয়েছি কানাডায়।
প্রথমটা, রাতের তিনটা বাজে আমরা মানে রাহাত এর বন্ধু, এবং বউ...আর আমরা বের হয়েছিলাম লং ড্রায়ভ করার জন্য। আমার জামাই খুবি ক্লান্ত ছিল বলে আমি করি। আর করতে করতে চলে যাই অনেক দূরে একটা সহরে। চারটা জানালা নামানো, সানরুফ খোলা প্রচন্ড বাতাস আর গানের সুরের মধ্যে আমিও হারিয়ে গিয়েছিলাম গাড়ি চালাতে চালাতে। খুব ভালো লাগছিল। দুটো ছেলে পেছনে আর আমরা দু'টো মেয়ে সামনে। একটা অজানা শহরে চলে গিয়েছিলাম নাম আবিস্কার করলে পরে জানতে পারলাম "মারখাম - Markham" টানা দু'ঘন্টা পথ। খুবি সুন্দর শহর। আশে পাশে বাড়ি দেখতে দেখতে সবাই বলে উঠল ঠিক আছে এবার ফিরে চল। আসার পথে রাহাত আমাকে জিজ্ঞেস করল ও চালাবে কিনা? আমি না করে চালাতে থাকি। হঠাৎ করে গিঞ্জি মারখা একটা কর্ণার থেকে আওয়াজ দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে সামনে এসে পড়ল। রাহাতের মুখ শুকিয়ে যাই। সবাই কথা বলা শুরু করল যে ইন্সুরেন্স বেড়ে যাবে। রাহাত ও টিকেট খাবে। আমি চুপ। অফিসার এসে কোন কিছু শুনতে চাইল না। লাইসেন্স নিল আর টিকেট দিল। হাস্যকর। তবে টিকেট পাওয়ার পর আমি জিজ্ঞেস করি রাহাতের কোন ক্ষতি হবে কিনা। অফিসার জানালো ওর গাড়ি অথবা ইন্সুরেন্স এর কোন ক্ষতি হবেনা। অফিসার চলে যাই যাওয়ার সময় বলে গেল ড্রাইভ সেফলি। এরপর আবারো আমি চালিয়ে বাসায় পোঁছায়। তিক্ত অভিজ্ঞতা।
দ্বিতীয়টা, বিকেলে জামাইকে নিয়ে আসার পথে দেখি ডান পাশে ক্যামরা বসিয়ে অফিসার অনেক গাড়িকে থামাচ্ছে, আমাকেও। বেচারা রাহাত এর চেহেরা মলীন হয়ে যাই। আমি খুবি অপমান বোধ করি। অফিসার বলে আমাকে আমি নাকি ৫ কিমি. বেশী চালাচ্চিলাম। মানে ৫০ ছিল আমি ৫৫ কিলোমিটারে ছিলাম। ৫ কিলোমিটার বেশি বলে আমি আর একটা টিকেট খেলাম। টিকেট দিতে দিতে বলে তোমার পে করা না করা কোন পার্থক্য সৃষ্টি করেনা। তারপরো আমাদের কর্তব্য টিকেট দেয়া অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারছিনা। উফ আর একটা যোগ হল। কখনো ৫ মাইলে বেসির কারনে আমি টিকেট পাইনি ফ্লোরিডায়। অসহ্য!!! এই কি শুরু হল আমার সাথে একটার পর একটা।
তৃতীয়টা পেলাম একজন ভাইয়াকে নামাতে গেলাম সাবওয়ে স্টেষনে, তখন দেখি লাইট জ্বালিয়ে দিল আমার পিছনে। আমার মাথা আঊট হয়ে গেল কেন কি করলাম আবার? এরপর অফিসার এসে বলে আমাকে "do you know why i stop you?" হে আমি জানলে গাধা এইখানে হতভম্ব হয়ে বসে রইতাম না, গাধা কোথাকার। "no i don't"...অফিসার উত্তর শুনে বলে "well you have stop in wrong place to drop passenger" হাইরে কপাল। ভাইয়া দেখি স্টেষন থেকে বের হয়ে আবার এল আমার কাছে, উনি নিজেকে গালি দেয়া শুরু করে ভাবী আমার উচিৎ হয়নি আপনার কাছ থেকে রাইড নেয়ার। আমি ভাইয়াকে সান্তনা দিচ্ছিলাম আর ভাইয়া আমাকে। এই মধ্যে অফিসার জিজ্ঞেস করল ইন্সুরেন্স এর কপি দিতে। আমি আর ভাইয়া খুঁজতে থাকি। পরে রাহাতকে ফোন করে জানতে পারলাম, ওর কাছে ইন্সুরেন্স এর কপি। কখনো প্রয়জন পরেনি বলে গাড়িতে রাখার তাই রাখেনি। উফ, এখন আরো একটা টিকেট দিবে আমাকে যেহেতু ইন্সুরেন্স নেই। আমি অফিসার এর সাথে অনেক কাঁকুতি মিনতি করি। আমি এখানের নই। আমি জানতাম না এইখানে নিয়ম নেই। এইসব বলার পর অফিসার আমাকে একটা টিকেট দিল কারন ইন্সুরেন্স নেই বলে বাকিটা ক্ষমা করে দিল। কিন্তু এখনো বুঝতে পারলাম কেন ও আমাকে আসলে থামিয়ে ছিল।
সব চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল টিনটে টিকেত পেলাম পর পর তিনদিন। যেন আমার পিছনে শনি পরেছিল। কানাডার সব শনি আমার পিছনে এসে মেতেছিল। উফ! আমি ঠিক করেছিলাম পে না করলে চলবে যেহেতু আমি অন্য দেশের বাসিন্দা। কিন্তু আমি ফ্লোরিডায় চলে যাওয়ার পর আমার সীমান্ত পে করে দিয়ে আসল। কারন ও বলছে আগে পরে আমার লাইসেন্স এইখানে আসবে এবং কনবার্ট করার পর ওরা যদি দেখে আমার লাইসেন্স এর মদ্ধে এত দাগ তাহলে অসুবিধে হবে। কি আর করা। তবে কানাডায় খুবি সাবধানে থাকতে হবে শনি এখনো ছাড়েনি আমাকে।

6 comments:

  1. রাস্তার নিয়ম-কানুন না জেনে ড্রাইভ করলে তো টিকিট খাবিই। সেটাই তো সাধারণ ব্যাপার। আমাদের এখানেও সব হিসাব করে কিলোমিটারে। মাইলে না। আর নো স্টপিং জোনে বলদের মতন দাঁড়াইসিলি ক্যান ? রাস্তার পাসের সাইন গুলা কি চোখে পড়েনাই তোর ?

    ReplyDelete
  2. রাস্তার নিয়ম কানুন জেনে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু এত অতভুত জানতাম না। বিনা কারনে আমাকে থামালো ওটা কোনো স্টপ সাইন ছিলনা। অথবা ওখানে কোথাও লিখা ছিলনা। আন্দাজে কোত্তেখে হাজির হয়ে টিকেট দিয়ে যাই। আমার লিখা তুই ভালো করে পড়।

    ReplyDelete
  3. তাইলে মনেহয় পুলিশ গাড়ি চালানোর স্টাইল দেইখাই বুঝসিল যে এই মদনকে থামাইলে টিকেট দেওয়া যাইবো !!!

    ReplyDelete
  4. পুলিশ ঘুমাইতেছিল, যখন জাগে তখন অনেক দেরি হয়ে যাই আর কেয়াল করে কোন মক্কেল ধরেনি তেমনি আমার উপর তার নজর পরে...বেটা

    ReplyDelete
  5. পুলিশটার নানা অথবা দাদা অথবা দাদার দাদা অথবা দাদার নানা অথবা নানার নানা অথবা নানার দাদা কেউ হয়তো বাঙ্গালী ছিল ;) এ জন্যই মনে হয় কাজ ফেলে ঝুমাচ্ছিল......... :D

    ReplyDelete
  6. এইভাবে নিচু করা ঠিক হচ্ছে আমাদের জাতিকে? ও আরো নিষ্টুর ছিল। :( এই তুলনা কিছুই না।

    ReplyDelete

নিজের মতামত প্রকাশ করলে ভাল লাগবে। ধন্যবাদ!