Wednesday, August 05, 2009

আমাদের প্রথম ভ্রমণ - জুলাই ২৬, ২০০৯



ফ্লোরিডা ছেড়ে উড়াল দিলাম কানাডার পথে। শুরু হবে আমার নতুন জীবন। নতুন মানুষ, জাইগা, নিয়ম, চাকরি, বাজার, খাদ্য, আবহাওয়া, বরফ, বৃষ্টি পড়া, ইউনিবার্সিটি, কাপড়...সব কিছু অতী নতুন। নতুন গ্রহন করা আমার পক্ষে অসম্ভম কিছু না। আমার নতুন ভালো লাগে, তাই বলে...
যদিও আমেরিকা কানাডার প্রতিবেসী তারপরও অনেক পার্থক্য আছে। সব সত্তেও দুটো ভিন্ন দেশ। যেমন, কানাডার দেয়া উপহার দিল তিনটে টিকেত একটি ভুল অন্যটি ওদের টাকার খুবি প্রয়োজন ছিল...

বিয়ের আগে সব সময় বলতাম কখন আমরা এক সাথে ভ্রমণ করব। খুব ইচ্ছে ছিল। সেই ইচ্ছে পূর্ণ হয়ে গেল। ফ্লোরিডা থেকে আসার সময় দু'জন এক সাথে ভ্রমণ করব সেই আনন্দে মেতে ছিলাম। বিদায় কালে অনেক কষ্ট পেলেও সেই কষ্ট উধাও হয়ে যায় সময়ের সাথে, তবে আমি জানি এই কষ্ট আমার পিছু ছাড়বেনা।

যতবার আমি একা ভ্রমণ করেছি সব সময় রাহাত আমার সাথে ফোনে থাকত। যতক্ষন পর্যন্ত প্লেনে উঠে বসা হতনা। আজ দু'জন একসাথে। ওকে বলি এখন কি করবে? ও সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল "চল তুমি আমার মোবাইল ফোনে রিং দাও পে'ফোন থেকে" এটা বলে দু'জন হেঁসে উঠি।

রাহাতের সাথে অনেক ঝগড়া হয়েছিল কানাডা আসার ব্যাপারে। আমাকে যা বলেছিল এমেরিকার সম্বন্ধে তা সত্যি তারপরো আমার একদম মত ছিলনা কানাডায় আসার। অসহ্য লাগতো চিন্তা করতে। দম আটকে আসত। এখনো আসে। এইযে এখন আমি পুরো একা বাসায় এবং গানের ভলুয়ুম একদম হাই করে রেখেছি। তারপরো ফ্লোরিডার চিন্তা মাথা থেকে নামছেনা কিছুতে।

বোরডিং পাশ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের দু'জনের আলাদা সিট। মেজাজটা গেল খারাপ হয়ে। এমন বিরক্ত লাগা শুরু হলো যে বোঝাতে পারবনা। একি বিমানে থাকার সত্ত্বেও আমি এক প্রান্তে আর ও অন্য। আমার ডানপাসের জনকে জিজ্ঞেস করব ঠিক করলাম। ওকে জিজ্ঞেস করতেই না করে দিল, "sorry don't wanna go all the way back" রাহতের সিট ছিল অনেক পিছনে। আর ওখান থেকে কেউ সামনে আসবেনা, কারন ওদের বেগ সিটের উপরের কেবিনেটে রাখা হয়েছে। আমার বামে তখন কেউ বসেনি ভাবছিলাম কেউ না বসলে কাজ হয়ে যাবে। বলতে না বলতেই এসে হাজির। মাসাআল্লাহ! দেখতে আমার চারগুন হবে। আল্লাহ! কি বলব দু'জনের মাঝখানে পড়ে আমার অবস্থা খারাপ। এবার বামেরজনকে, সুন্দর করে হাসি দিয়ে : এক্তু সিটটা কি দিতে পারবে? আমার "ক" পিছনে বসেছে। তখনি "i don't care i can sit wherever" আমার খুশি দেখে কে? হাহাহাহা খুশিতে দিশেহারা।

কথা বলতে বলতে কখন বিমান লেন্ড করে ফেলেছে টের পেলামনা। দুই ঘন্টা...আমরা লেন্ড করলাম Charlotte, NC, USA আমাদের পরের ফ্লাইট ছিল এক ঘন্টা পর। তবে গেটে পোঁছাতেই জানতে পারলাম আমাদের বিমান এখনো আসেনি। আসবে রাত ১২টায়। তাহলে আমাদের বিরতি নেয়ার সময় এখন। ওয়াশরুম থেকে আসার পথে দেখি কি সুন্দর একটা ছোট্ট গাছ। দেখে ভালো লাগলো। পাব্লিক ওয়াশরুমে আমি কখনো গাছ দেখিনি। তাও আমেরিকায়।

ক্ষিধায় চোঁ চোঁ করছিল পেটুকমশাই। একটা ইটালিয়ান রেস্টুরেন্ট থেকে খেলাম পাস্তা। প্রায় ঘন্টা খানেক কথায় মেতে ছিলাম হঠা দেখতে পেলাম রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে। ওরা জানালো সব বন্ধ হয়ে যাবে দশটাই। আবার চলে যাই গেটের পাশে। কি করব এখন? মুভি দেখলাম "শুন্য এই বুকে" রাহাতের সাথে এই প্রথম দেখলাম ছবিটা। তাও নতুন হেডফোন দিয়ে। আমার বন্ধুর নতুন হেডফোন উদ্ঘাটন করলাম, দারুন এক হাইফাই হেডফোন এত দাম দিয়ে হেডফোন কেনার কখনো সাহস হইনি আমার। যাই হোক রাহাতের মন পড়েছিল গেটের দিকে। গেট থেকে এক্তু দূরে ছিলাম আমরা। ও আমার চেয়েও অনেক সচেতন। খুব চিন্তা ভাবনা করে পা ফেলে। আমার উলটো।

পরিশেষে এসে পোঁছায় কানাডায় রাত ২টায়...

ও হে ছবিগুলো আমি তুলেছিলাম মোবাইল দিয়ে...

7 comments:

  1. মিয়ামি থেকে কানাডা............ কানাডার কোন সিটিতে??? :)

    ছবিগুলো আসলেই দারূন হয়েছে!!!! স্রষ্টার সৃষ্টি দেখে আমি অভিভূত!!!

    দুর্ভাগ্য আমার :( প্লেনে চড়েছি ঠিকই, সিটও পেয়েছিলাম জানালার পাশেই, কিন্তু ফ্লাইট ছিল রাতের বেলা :( জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই গাড় অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই :(

    তবে প্লেন যখন রানওয়েতে দৌড় দিয়ে আকাশে পাখির মত উড়াল দিল, তখন নিচে তাকিয়ে "রাতের ঢাকা" দেখলাম। উপর থেকে ঢাকা শহর যে এত্তোওওওও সুন্দর, আগে জানতাম না :)

    ReplyDelete
  2. আমি কানাডার স্কারব্রোতে আছি।
    অনেক ধন্যবার ছবির প্রশংসা করার জন্য। আমিও অভিভুত।

    আমি দুয়া করি পরবর্তিতে আপনার ফ্লাইট যেন সকালে হয়। নইলে যে সব কিছুই মিস করবেন।

    পৃথিবী কত সুন্দর তার রুপ যেমনটি বোঝা যাই নিচ থেকে তার চেয়ে দ্বিগুন আকাশ থেকে।

    ReplyDelete
  3. তুমি করে বলবেন :) আমি আপনার চেয়ে অনেক ছোট্ট :D

    কিন্তু প্রবলেম হল মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের সব ফ্লাইটই রাতের বেলায়, দিনে একটাও নেই :(

    আমার সবচাইতে প্রিয় কাজগুলোর একটা হল, চিত হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখা :) আকাশের উদারতায় আমি মুগ্ধ, স্রষ্টার সৃষ্ট এই আকাশ দেখে আমি অভিভূত......

    ReplyDelete
  4. ঠিক আছে অনুমতি পেয়ে গেলাম যখন তুমি বলার তাহলে ঠেখায় কে? শুরু হলো তাহলে আপনা থেকে তুমি।

    তাহলে তোমাকে ওদের জানাতে হবে তুমি রাত নয় দিনের ফ্লাইট চাও। অথবা অন্য দেশ ঘুরে দেশে যাবে? তাও করতে পার...তাইনা? তখন রাত থেকে দিন হয়ে যাবে এক দেশ ঘুরলে ওই দেশ থেকে বাংলাদেশ। বাস নতুন দেশ ও দেখা হল আর আকাশ ও। কি বল চমৎকার প্লেন করে দিলাম না?

    আকাশ দেখার মজাই আলাদা বিশেষ করে ছাদ থেকে।

    ReplyDelete
  5. আমি আপু ছাত্র মানুষ............ অন্য দেশ ঘুরে যাব??? তাহলে তো টিকেটের দাম পড়বে তিনগুণ :D এতো টাকা হয়নি এখনো, যেদিন হবে সেদিন না হয় বিবেচনা করব :)

    হুম্মম্মম, তবে ছাদের চেয়ে আমার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে ধানক্ষেতের পাশে আইলের উপর শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশ দেখতেই বেশি ভাল লাগে। গ্রামে যখন যেতাম, তখন সন্ধ্যায় মাগরিবের পরেই চলে যেতাম ধানক্ষেতে আমার এক চাচাত ভাইয়ের সাথে। রাতের বেলার আকাশে থাকে লাখো-কোটি তারা...... তার মধ্যে নিউক্লিয়াস হয়ে থাকে হল চাঁদ মামা :D এই দৃশ্যের মধ্যে যে কি অপরূপ সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে তা আসলেই বোঝানো যাবেনা!!!!! আর সেই রাত যদি হয় জোছনা রাত্রি, তাহলে তো কথাই নেই :D

    এখন আর সেই চাঁদ মামাকে দেখিনা :( এটাই আমার সবচাইতে বড় কষ্ট :( চাইছিলাম লিখে রাখতে, কিন্তু লিখলেই তো আর আমার দেশের চাঁদ মামা ফিরে আসবেনা :(

    http://tariqridwan.blogspot.com/2009/08/blog-post_07.html

    ReplyDelete
  6. আমি এখন দেশে :D

    এবার আহামদুলিল্লাহ দিনের বেলায় ফ্লাইট ছিল। আকাশ দেখতে দেখতে এলাম............... :-)

    আসলে উপর থেকে যে আকাশ দেখতে এত্তো সুন্দর!!! আগে জানতামনা..................

    ReplyDelete

নিজের মতামত প্রকাশ করলে ভাল লাগবে। ধন্যবাদ!